সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু আর নেই

নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের প্রবীণ সাংবাদিক ও একুশে টেলিভিশনের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার নবীউর রহমান পিপলু ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন ব্লাড ক্যান্সার ও বোনম্যারো রোগে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার এএমজেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি স্ত্রী রেখে গেছেন, তবে তার কোনো সন্তান ছিল না।
নবীউর রহমান পিপলু ১৯৫৭ সালের ১০ জানুয়ারি বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার চাকুরির সুবাদে তিনি সপরিবারে নাটোরে আসেন। ১৯৮১ সালে সাংবাদিকতা শুরু করে একুশে টেলিভিশনের শুরু থেকে নাটোর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নাটোরের সিনিয়র সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক নবীউর রহমান পিপলু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম। তিনি শুধু একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধাই নন, বরং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকতা ও সমাজসেবার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও বীরত্বঃ
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে নবীউর রহমান পিপলু মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি নাটোরের আলাইপুর এলাকার বাসিন্দা এবং তৎকালীন নাটোর হাসপাতালের কর্মচারী রশিদুর রহমান ও নূরুননেছা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নাটোরের ট্রেজারি থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজের ছাত্রাবাসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে তিনি ভারতের বালুরঘাট, রায়গঞ্জ ও শিলিগুড়ির বিভিন্ন ক্যাম্পে গেরিলা ও অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। তিনি ৭ নম্বর সেক্টরের তুফানি ব্যাটালিয়নের সদস্য হিসেবে হিলি, পাঁচবিবি, জয়পুরহাট, গোবিন্দগঞ্জ ও নওগাঁ এলাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
একটি উল্লেখযোগ্য অভিযানে তিনি নওগাঁ সীমান্তের ফার্সিপাড়া সেতু ধ্বংস করতে গিয়ে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হন এবং সফলভাবে শত্রুদের পিছু হটাতে সক্ষম হন।
সাংবাদিকতা ও সমাজসেবা
মুক্তিযুদ্ধের পর নবীউর রহমান পিপলু সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টেলিভিশন ও দৈনিক সমকালের নাটোর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহী থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল পদ্মাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি নাটোর টিভি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সাংবাদিকতা জীবনে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস তুলে ধরতে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।
পারিবারিক জীবন ও ব্যক্তিগত অনুভূতি
নবীউর রহমান পিপলুর পরিবারে ১১ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। তার আরও ৯ ভাইবোন জীবিত রয়েছেন। তার বাবা রশিদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়েছেন, তবে দুঃখজনকভাবে তার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যা পিপলুর জন্য গভীর বেদনার বিষয়।
নবীউর রহমান পিপলু শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সহযোদ্ধা ও শহীদদের স্মৃতি বহন করেন এবং তাদের অবদানকে স্মরণ করে গেছেন।