পুঙ্গত্ব বরণের পথে ভ্যানচালক সাইদুল ইসলাম !

কালিদাস রায়
সারাজীবনের জন্য পুঙ্গত্ববরণ করতে চলেছেন নাটোরের গুরুদাসপুরের ধানুড়া গ্রামের ভ্যানচালক সাইদুল ইসলাম (৩৬)। গত ৬ মে সকালে অবৈধভাবে পুকুর খননকারীদের নির্দেশে এস্কেভেটর (ভেকু) চালক ভেকুর ধারালো বাকেট দিয়ে সাইদুল ইসলামের পায়ে আঘাত করে। এতে সাইদুলের পায়ের গোড়ালি পা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পায়ের হাড় (ফিবুলা) কয়েক টুকরো হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রæত সময়ের মধ্যে পায়ের অপারেশন করত না পারলে সারাজীবনের জন্য পুঙ্গত্ব বরণ করতে হবে সাইদুল ইসলামকে। অথচ অপারেশন ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হতদরিদ্র ভ্যানচালক সাইদুলের পরিবার। অন্যদিকে এই ঘটনায় গুরুদাসপুর থানায় করা মামলায় অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর হোসেন, ভেকু চালক আব্বাস আলী ঘটনার একদিন পরেই জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় প্রকাশ্যে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে সাইদুল ইসলাম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের ৩১ নাম্বার ওয়ার্ডের বি বøকের ৭০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে এক নার্স জানান, সাইদুল ইসলামের পায়ের অবস্থা খুব জটিল। পুরোপুরি সেরে উঠতে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন। সাইদুলের পায়ে কমপক্ষে একাধিকবার অপারেশন করা লাগতে পারে।
রামেকে চিকিৎসাধীন সাইদুল ইসলাম জানান, আমি কোন বিচার-সালিশে বসতে চাইনা। আমার পা ঠিক করে দিক। আমার কোন অভিযোগ নাই।
আহত সাইদুলের সদ্যপ্রসূতি স্ত্রী খাদিজা বেগম জানান, আমার স্বামী ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। আমাদের ঘরে ১০ দিন বয়সের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এদিকে স্বামীর অপারেশন ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমাদের পক্ষে যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
চাপিলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল নয়ন জানান, ভুক্তভোগী পরিবারকে আর্থিক এবং আইনগত সহযোগীতা দেওয়ার চেষ্টা করছি। শুনেছি, অভিযুক্তরা জামিনপ্রাপ্ত হয়ে পাল্টা মামলার হুমকি দিচ্ছে। আমরা সাইদুলের পাশে আছি। কেউ তার ক্ষতি করার চেষ্টা করলে আমরা প্রতিরোধ করব।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরির্দশক শাহাজাহান আলী জানান, অভিযুক্ত কর্তৃক পাল্টা মামলার হুমকির বিষয়টি জানি না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা আফরোজ জানান, আমি নিজেই ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তাকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সহযোগীতা করা হচ্ছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৬ এপ্রিল অভিযুক্তরা এস্কেভেটর (ভেকু) নিয়ে গুরুদাসপুর উপজেলার ধানুড়া এলাকায় পুকুর খনন করতে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা বাধা দেয়। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার এক পর্যায়ে ভেুক চালক ভেকুর ধারালো বাকেট দিয়ে ছেলেকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে সাইদুল ইসলামের পায়ে আঘাত করে। এতে সাইদুলের পায়ের গোড়ালি পা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পায়ের হাড় (ফিবুলা) কয়েক টুকরো হয়ে যায়। এই ঘটনায় সাইদুলের ভাই ফরিদুল ইসলাম বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় মামলা করেন।