৩ দিন পর থেকে তাপমাত্রা কমতে থাকবে: আবহাওয়া অধিদপ্তর

নিউজ ডেস্ক :
চুয়াডাঙ্গায় আজ শনিবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এই সময়ে বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকায় জনজীবনে দুর্ভোগ ছিল বেশি। এর আগে শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকায় আজকের তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া যশোরে ৪১ দশমিক ৬ এবং ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তাপমাত্রা আরও তিন দিন এ রকমই থাকবে। পরশু কিছুটা বাড়তে পারে। তারপর ক্রমান্বয়ে তাপমাত্রা কমতে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘২ মে থেকে দেশের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হবে। এই সময় ঢাকায় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৩-৪ মে থেকে আশা করা যায়, প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টি হবে। ফলে তাপমাত্রা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।’
বজলুর রশিদ বলেন, ‘এপ্রিল আমাদের উষ্ণতম মাস। মে মাসেও দেখা যায়, মাঝে মাঝে তাপপ্রবাহ আসে। যেহেতু মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, সাধারণত এই বৃষ্টি তিন থেকে পাঁচ দিন হয়। বৃষ্টি শেষ হয়ে গেছে আবার তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
‘সে ক্ষেত্রে দেশের অনেক জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের এবং কোনো কোনো জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে তীব্র তাপপ্রবাহ আসতে পারে। যেহেতু মে মাসে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে, অনেক সময় দেখে যায়, তাপপ্রবাহ না থাকলেও গরম অনুভূত হবে,’ বলেন তিনি।
বজলুর রশিদ আরও বলেন, ‘এপ্রিলে যে রকম টানা তাপপ্রবাহ ছিল, হয়তো মে মাসে সে রকম থাকবে না। চার-পাঁচ দিন তাপপ্রবাহ থাকলে তারপর আবার বৃষ্টি হবে।’
চুয়াডাঙ্গায় এতো বেশি গরম পড়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এর কিছু প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে। সে অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে তাপপ্রবাহ বেশি হয়।
কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা নির্ভর করে ওই এলাকার ভূ-প্রকৃতি, সমুদ্র থেকে দূরত্ব, স্থলভাগ ও জলভাগের অবস্থান, বনভূমির অবস্থান ইত্যাদি নানা বিষয়ের ওপরে। চুয়াডাঙ্গার আশেপাশে বড় কোনো জলাভূমি বা বনভূমি না থাকা এ অঞ্চলে তীব্র গরমের অন্যতম কারণ।
গত বছর আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে এপ্রিল হচ্ছে সর্বোচ্চ গরম মাস। এই সময়ে পৃথিবী সূর্য থেকে রশ্মি বা কিরণ পায় সেটি লম্বালম্বিভাবে পায়।
সূর্যকে কেন্দ্র করে যে কক্ষপথ ধরে পৃথিবী ঘুরছে সেখানে পৃথিবীর অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ সবচেয়ে কাছ থেকে সূর্যরশ্মি গ্রহণ করছে।
অন্যভাবে বলতে গেলে, এপ্রিল মাসে সূর্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে। যার কারণে সূর্যের তাপ বেশিই পরে এই অঞ্চলে।
যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, খুলনা এই অঞ্চলে বিস্তৃত সমভূমি রয়েছে। এছাড়া এই অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ। সেখানেও বিশাল এলাকা জুড়ে সমভূমি।
ফলে তাপমাত্রা প্রবাহের যে তিনটি পদ্ধতি রয়েছে- পরিবহন, পরিচলন এবং বিকিরণ- এই তিনটি পদ্ধতির মধ্যে সমভূমি হওয়ার কারণে এই অঞ্চল দিয়ে পরিবহন পদ্ধতিতে তাপ প্রবাহিত হয়। ফলে সরাসরি তাপ লাগার কারণে পুরো অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশি থাকে। দ্বিতীয়ত, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকা দিয়ে জলীয় বাষ্প প্রবেশ করায় তাপমাত্রা বাড়ে।